মিনি গল্পঃ স্বদেশপ্রেম | মুহাম্মাদ ইমরান


গাছের পাতাগুলোয় আলতো দোলা দিয়ে বইছে ভোরের মৃদুমন্দ বায়ু। রাত পোহাতেই
কিচিরমিচির রব তুলে গাছের ডালে এসে বসেছে দুটি টুনটুনি। ভারী সুন্দর
টুনটুনি পাখি। ছোট্ট ছিমছাম তাদের বদন আর বড্ড আদুরে গড়ন। যে কেউ দেখলে ওদের
ধরতে প্রবৃত্ত হবে। কিন্তু বড্ড কঠিন ওদের কব্জা করা। দিনভরের উষ্ণ রোদ্দুরে অতিষ্ঠ হয়ে যায়
তারা। গ্রীষ্ম এলে জলবায়ুর উত্তাপে প্রতিনিয়তই বেহাল দশার মুখোমুখি হতে হয় তাদের।
ভোরের এ হিম ছড়ানো মৃদুমন্দ বায়ু তাদের কাছে তাই অনেক প্রিয়। প্রভাত-বায়ুর
আলতো ছোঁয়ায় তারা সজিব আর প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। সূর্যটা তপ্ত রশ্মি ছড়িয়ে
দেওয়ার আগ পর্যন্ত, এ প্রভাতী বায়ুর সঙ্গে সখ্যতা আর খুনসুটিতে বেশ আমোদ
আনন্দে তারা সময় পার করে।
প্রভাত-বায়ু দেখল, টুনটুনি দুটি উষ্ণ অঞ্চলে একাকী একটি গাছের ডালে জীবন পার
করছে। তাই কথায় কথায় একদিন জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা টুনটুনি! তোমরা তো অনেক
সুন্দর আর নরোম বদনের পাখি। কিন্তু তোমাদের ব্যাপারটি বড় আশ্চর্য রকম ঠেকে আমার
কাছে। কি করে তোমরা এ খরাকবলিত অঞ্চলে বাস কর? তোমরা যদি বল আমি যেখান থেকে
এসেছি,  সেখানে তোমাদের উঠিয়ে নিয়ে যাব। জানো, সেখানে কি কি
সুখসামগ্রীর সমাহার আছে? সেখানে আছে সুশীতল মধুরম মিষ্টি পানির নদনহর।
যত্তসব মিষ্টি মিষ্টি, এক্কেবারে যেন চিনির মতো মজাদার সব গুল্ম, বীজ আর উদ্ভিদ।
তোমরা যদি মত দাও এখনই নিয়ে যাব তোমাদের। প্রভাত-বায়ু নিজ দেশের নান্দনিক
বিবরণ শেষ করতেই টুনটুনিদের একজন পাখা ঝাপটিয়ে জবাব দেওয়া শুরু করল, “হে
প্রভাত-বায়ু! তুমি তো প্রতি দিনই একেক স্থানে যাও। দেশে দেশে ঘুরে বেড়াও। স্বদেশের
মূল্য আর মাতৃভূমির ভালোবাসার মর্ম তুমি কি বুঝবে? স্বদেশ ছেড়ে ভিনদেশে ঘুরঘুর
করা সহজ হতে পারে তোমার জন্য। কিন্তু জেনে রেখো,  স্বদেশের জলবায়ু যতই উষ্ণ হোক,
স্বদেশের দানা-পানি যতই তিক্ত আর লবনাক্ত হোক, তবু আমরা স্বদেশ ছাড়তে পারি না। পারি
না চলে যেতে কোনো ভিনদেশে; হোক না সে দেশ পৃথিবীর বুকে অবস্থিত অদ্বিতীয় ও
নজিরবিহীন কোনো স্বর্গরাজ্য!”


Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

শিশুতোষ গল্পঃ রাজকন্যা ও ব্যাঙ | মোনোয়ার হোসেন

খোকা আঁকে | তৌহিদ আহাম্মেদ লিখন

গল্প : পিতার আর্তনাদ | কবির কাঞ্চন