শিশুতোষ গল্পঃ রাজকন্যা ও ব্যাঙ | মোনোয়ার হোসেন

অনেক দিন আগের কথা। এক রাজার এক মেয়ে ছিল। তার নাম ছিল রাজকন্যা। রাজকন্যা দেখতে ছিল ভীষণ কিউট । তাই তার মনে খুব অহংকার ছিল। সবসময় সে সুন্দরকেই পছন্দ করত , আর ভালোবাসত। দেখতে বিচ্ছিরি এমন কাউকে দেখলে নাক ছিঁটকাত । ঘৃণায় তার শরীর রি রি করত । সেই রাজকন্যার ছিল একটি সুন্দর সোনালি রঙের বল । জন্মদিনে বাবা তাকে এই বল উপহার দিয়েছিল । বলটি ছিল রাজকন্যার ভীষণ পছন্দের। সব সময় এই বলটি নিয়েই খেলা করত সে।

একদিন বিকেলে বলটি নিয়ে রাজপ্রাসাদের বাইরে বাগানে খেলছিল সে ।এমন সময় তার কাছে লাফাতে লাফাতে এল এক বিচ্ছিরি ব্যাঙ।  বলল, তোমার বলটি খুব সুন্দর ! আমাকেও তোমার সাথে খেলতে নিবে?
বিচ্ছিরি ব্যাঙ দেখেই তো রাজকন্যার শরীর ঘৃণায় রি রি করে উঠল।  নাক কুঁচকে গেল। আর এই বিচ্ছিরি ব্যাঙ কিনা বলে তার সাথে  খেলতে হবে ! রাগে কাঁপতে লাগল রাজকন্যা ।  বলল, বিচ্ছিরি ব্যাঙ, তোমার এত সাহস হয় কি করে যে, তুমি একটা বিচ্ছিরি ব্যাঙ হয়েও আমার সাথে খেলতে চাও ? আমি কোনো বিচ্ছিরি ব্যাঙের সাথে খেলা করি না। বলে রাজকন্যা রাগে গর গর করতে করতে প্রাসাদে ফিরে এল।
পরের দিন রাজকন্যা আবার বাগানে খেলতে গেল। মাটিতে বল ছুড়ে ছুড়ে খেলতে লাগল । পাশে ছিল এক বড় কুয়া। রাজকন্যা খেয়াল করেনি । কুয়াটা ছিল খুব গভীর আর পানিতে ভর্তি । বলটা লাফাতে লাফাতে এসে পড়ল সেই  কুয়ায়। তারপর পানির নিচে তলিয়ে গেল। প্রিয় বলকে কুয়ায় পড়ে যেতে দেখে রাজকন্যা কাঁদতে লাগল। তার কান্না শুনে ছুটে এল সেই বিচ্ছিরি ব্যাঙ।
কি হলো রাজকন্যা, তুমি কাঁদছো কেন? বলল বিচ্ছিরি ব্যাঙ।
রাজকন্যা কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমার সুন্দর বলটা এই কুয়োর মধ্যে পড়ে গেছে।
আমি তোমায় কুয়ো থেকে বল তুলে দিতে পারি।
সত্যি, সত্যিই তুমি কুয়া থেকে আমার সুন্দর বলটি তুলে দিতে পারবে ? খুশিতে গদগদ করে বলল রাজকন্যা। যদি তুমি আমার বল তুলে দাও,  তাহলে আমি তোমাকে অনেক অনেক উপহার দেব।
আমার কোনো উপহার চাই না।
তবে কি চাই ?
তুমি যদি আমার বন্ধু হও, আমার সাথে প্রতিদিন খেলা কর , তবেই আমি তোমার বল কুয়া থেকে তুলে দিতে পারি।
ঠিক আছে , আমি তোমার বন্ধু হব, তোমার সাথে খেলা করব, এবার তুমি আমার বলটি কুয়া থেকে তুলে দাও।
ব্যাঙ কুয়োয় লাফিয়ে পড়ল । এক ডুবে পানির নিচ থেকে বল তুলে নিয়ে এল।  রাজকন্যার হাতে দিল । বল পেয়ে রাজকন্যা খুব খুশি হলো। তারপর খুশি মনে রাজপ্রাসাদের দিকে দিলো এক ছুট।
পিছন থেকে ব্যাঙ ডেকে বলে , এই রাজকন্যা, তুমি কোথায় যাচ্ছ? তুমি আমার বন্ধু হবে না? আমার সাথে খেলা করবে না? তুমি কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছো , তুমি আমার বন্ধু হবে। আমার সাথে খেলা করবে।
ওরে বোকা বিচ্ছিরি ব্যাঙ, তুমি কি করে বিশ্বাস করলে আমি তোমাকে বন্ধু বানাব? অনেক দূরে গিয়ে চিৎকার করে বলল রাজকন্যা। আমি তোমাকে খুব ঘৃণা করি বিচ্ছিরি ব্যাঙ। হি হি হি।
রাজপ্রাসাদে গিয়ে বাবার মুখোমুখি হতেই রাজা বললেন, এ কী মা, তুমি হাঁফাচ্ছো কেন? তোমার কি কিছু হয়েছে?
রাজকন্যা তখন বাবাকে সব ঘটনা খুলে বলল। সব শুনে বাবা বললেন, তুমি রাজার মেয়ে। তুমি আদর্শ ও সত্যবাদিতা পরিপালন করবে। কাউকে ধোকা দেওয়ার চেষ্টা করবে না। তুমি যদি সত্যি সত্যি ব্যাঙকে বন্ধু করার ওয়াদা করে থাকো, তবে তোমাকে তা অবশ্যই করতে হবে। এটাই আমার আদেশ।
বাবার কথা শুনে আবার বাগানে গিয়ে বিচ্ছিরি ব্যাঙটাকে রাজপ্রাসাদে নিয়ে এল রাজকন্যা। খেতে দিল । ব্যাঙ পেট ভরে স্যুপ খেল। তারপর বলল, অনেক খাওয়া হলো।  এবার একটু ঘুম দেওয়া দরকার।
যাও বাগানে গিয়ে ঘুমাও। বলল রাজকন্যা।
কেন রাগ করছো বন্ধু, আমি তোমার নরম তুলতুলে বিছানায় ঘুমাতে চাই।
বলে কী বিচ্ছিরি ব্যাঙ! আমার বিছানায় ঘুমাবে? রাগে কাঁপতে থাকে রাজকন্যা। তারপর রাগের মাথায় ব্যাঙকে ধরে দিলো এক আছাড় । বড্ড বার বেরে গেছিস তুই বিচ্ছিরি ব্যাঙ। এবার মর ।
কিন্তু এ কী , আছাড় খেয়ে ব্যাঙটা নড়ছে না কেন? সত্যি সত্যি মরে গেল নাকি? ভয় পেয়ে গেল রাজকন্যা। দৌড়ে গেল ব্যাঙটার কাছে। এই বিচ্ছিরি ব্যাঙ, উঠ। উঠ।
কিন্তু ব্যাঙ আর উঠছে না। সে মরে গেছে।
এবার সত্যি সত্যি ব্যাঙটার জন্য মনে মায়া জন্মাল রাজকন্যার। ব্যাঙটা ধরে কাঁদতে লাগল সে। আর তখনই ঘটল এক আজব ঘটনা। মরা
ব্যাঙটা জীবিত হয়ে গেল ! তারপর আস্তে আস্তে বড় হতে হতে হয়ে গেল সুন্দর এক রাজপূত্র !
রাজপূত্র দেখে চমকে উঠল রাজকন্যা। বলল,
কে তুমি?
আমি রাজপূত্র।
তুমি আমার ঘরে এলে কিভাবে?
রাজপূত্র সব খুলে বলল রাজকন্যাকে।
বলল, এক সময় আমার বাবা ছিলেন এই রাজ্যের রাজা। আমি ছিলাম বাবার একমাত্র সন্তান। মানে রাজকুমার। আমার নেশা ছিল পশু-পাখি শিকার করা। বনে বনে ঘুরে ঘুরে পশু-পাখি শিকার করা । একদিন হরিণ শিকার করার জন্য বনে গেলাম । তখন আকাশ থেকে নেমে এল এক সুন্দর পরি। বলল, তুমি বনের এই নিরপরাধ নিরীহ পশুপাখিদের হত্যা করছো কেন?
এটা আমার নেশা ।
না তুমি ওদের মারবে না। তোমার মতো ওদেরও প্রাণ আছে । তোমাকে আঘাত করলে তুমি যেমন কষ্ট পাবে, ওদেরকে আঘাত করলে ওরাও কষ্ট পায় ।
আমি পরির কথা শুনলাম না। পশু-পাখি শিকার করতেই লাগলাম। এতে পরি রেগে গিয়ে আমাকে অভিশাপ দিলো। আমাকে ব্যাঙ বানিয়ে দিলো। বলল, একদিন এই রাজ্যে এক রাজকন্যার জন্ম হবে। সেই রাজকন্যা হবে ভীষণ অহংকারী।  সে ছোটো ছোটো প্রাণিদেরকে ঘৃণা করবে। বিচ্ছিরি বলে গালিগালাজ করবে। এই অহংকারী রাজকন্যা কোনোদিন যদি ছোটো ছোটো প্রাণিদের ভালোবাসতে পারে তবেই তুমি মুক্তি পাবে। আমার মানুষ হবে। আজ তোমার ভালোবাসায় আমি আবার মানুষ হয়ে উঠেছি রাজকন্যা।
সব শুনে রাজকন্যা তার ভুল বুঝতে পারল। ব্যাঙের সাথে খারাপ আচরণ করার জন্য অনুতপ্ত হলো। ঠিক করল সে আর কোনো দিন প্রাণীকে বিচ্ছিরি বলে গালিগালাজ করবে না। কাউকে ঘৃণা করবে না। সবাইকে ভালোবাসবে। রাজপূত্রও ভালো হয়ে গেল। সে ঠিক করল আর কোনো দিন বনের নিরীহ প্রাণীদেরকে হত্যা করবে না।
তারপর দু'জনে খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেল।
মোনোয়ার হোসেন
ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোং লি:
সেতাবগঞ্জ জোনাল অফিস
সেতাবগঞ্জ, দিনাজপুর।
01737084169

Comments

Popular posts from this blog

খোকা আঁকে | তৌহিদ আহাম্মেদ লিখন

গল্প : পিতার আর্তনাদ | কবির কাঞ্চন