শিশু অঙ্গনঃ খেলাধুলার জন্য পর্যাপ্ত মাঠ চাই | আজহার মাহমুদ


একটি শিশুর বেড়ে উঠার জন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে জরুরী তা হচ্ছে খেলাধুলা।এছাড়াও খেলাধুলা তরুণ এবং যুবসমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখে। কিন্তু সারাদেশে খেলার মাঠ যেন দিন দিন কমে যাচ্ছে। বলাযায় এখন খেলার মাঠ খুব বেশী নেই। প্রতিটি খালি জায়গা এখন দালানকোঠায় রুপান্তরিত হচ্ছে। খালি কোনো জায়গা নেই, যেখানে বাচ্চারা একটু খেলবে  এবং দৌড়াবে। পক্ষান্তরে কিন্তু লোকসংখ্যা বাড়ছে। এতে করে শিশুর সংখ্যাও বেড়ে চলছে। ভবিষতে এই
শিশুরা মাঠ কোথায় পাবে সেটাও বড় চিন্তার বিষয় । এখন তরুণ ছেলেরাও খেলার জন্য মাঠ খুঁজে পায়না। মাঠ আছে শুধু জাতীয় পর্যায়ে খেলার জন্য। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে খেলার জন্য তৈরী হতে যে আগে খেলতে হয় সেটা আমরা অনেকেই ভুলে গেছি। নতুন নতুন স্টেডিয়াম হচ্ছে। কিন্তু এদিকে শিশু, তরুণ, যুবকরা খেলার জন্য মাঠ খুঁজে পায় না। ছোট ছোট খালি জায়গায়ও অনেক সময় ছেলে মেয়েরা ক্রিকেট, ফুটবল খেলে। কারণ তাদের ভেতর খেলাধুলার ইচ্ছা এবং আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু সেই ইচ্ছা এবং আগ্রহ একদিন মাঠের অভাবে হারিয়ে যাবে এসকল শিশুদের আর তরুণ এবং যুব সমাজরা হয়ে উঠবে ফেসবুক এবং মাদক নির্ভর। কারণ খেলাধুলা
খেলতে না পারলে বিকেলের অবসর সময় তারা নানান ভাবে নিজেদের জড়িয়ে ফেলতে পারে। এর মধ্যে মাদকাসক্ত অন্যতম। খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ সকলেরই কম বেশী রয়েছে, কিন্তু মূল বিষয় হচ্ছে খেলতে সবাই পারছে না। চট্টগ্রামের ১০ ওর্য়াড়ের স্থানীয় তরুণ ছেলেরা বলছে, তারা প্রতিদিন বিকেলে খেলার জন্য
মানুষের বকাবকি শুনে। তারা মাঠ না পেয়ে স্থানীয় স্কুল মাঠে খেলাধুলা করে। কিন্তু স্থানীয় মানুষরা তাদের খেলতে দেয় না। সেখানে নাকি শুধু স্কুলের বাচ্চারাই খেলতে পারবে। অথচ বিকেলের সময় স্কুলের বাচ্চারা চলে যায় বাসায়
আর মাঠ থাকে খালি। কিন্তু তবুও কেনো এই তরুণরা খালি মাঠটিতে খেলতে পারে না তা আমার বোধগম্য নয়। স্থানীয় হাজী দাউদ আহমদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মঠে তরুণরা খেলতে গেলে তাদের মন খারপ করে বাড়ি ফিরে যেতে হয় বকাবকি শুনে। স্থানীয় কমিশনার এবং মাননীয় প্যনেল মেয়রের আলহাজ্ব প্রফেসর
মন্জু এই বিষয়টি নিয়ে ভাববেন এটাই স্থানীয় তরুণ এবং যুবসমাজের প্রত্যাশা। তরুণরা চায় তারা যেন খেলাধূলার সাথে থাকে। মাদক থেকে তাদের বাঁচাতে স্থানীয় প্রশাসনকে এই বিষয়ে নজর দিত হবে। আমরা মাদকমুক্ত সমাজ গড়ারা জন্য কতই স্লোগান এবং আন্দোলন করি, কিন্তু বাস্তবে মনে হয় আমরা যেন
মাদকের পক্ষ নিয়ে কাজ করি। আমরা বলি, “খেলাধুলায় বাড়ে বল, মাদক ছেড়ে
খেলতে চল” কিন্তু খেলতে কোথায় যাবে সেটা কেউ আর ঠিক করে দেয় না। মাদকের রাস্তা তো এখন একটা বাচ্চা ছেলেও চিনে। কিন্তু খেলার মাঠ এখন কেউ খুঁজলেও পায় না। চট্টগ্রামের সকল স্থানেই এখন এমন অবস্থা। খেলার মাঠের সংকট। আশাকরি মাননীয় মেয়র মহোদয় এই বিষয়টির দিকে নজর দিবেন। কারণ আমরা জানি
মাননীয় মেয়র মহোদয় খেলাধুলা নিয়ে খুবই সচেতন। বলাযায় একজন ক্রীড়াপ্রেমিক মানুষ। তাই তার কাছে তরুণ সমাজের চাওয়া পর্যাপ্ত পরিমাণ খেলার মাঠ যেনো
চট্টগ্রামে থাকে। আমি যখন ঢাকায় ভ্রমণ করতে যাই, তখন দেখি সেখানকার তরুণরা কিভাবে খেলাধুলা করে। ছোট্ট গলির ভেতর তারা ক্রিকেট ফুটবল খেলে।
দেখতে একদিকে কষ্ট লাগলেও একদিকে খেলার প্রতি তরুণ সমাজের আগ্রহ দেখে ভালো লাগে। বর্তেমানে ছক্কা মারার মতো কোনে মাঠ নাই। এখন সবস্থানে শর্টপিচ নামক খেলাধুলা হয়। অন্যদিকে জোরে শ্যুট করে গোল দেওয়ার মতো পরিস্থিতি নাই। এখন ফুটবল খেলা হয় মিনিবারের। যেখানে গোলকিপার বলতে কিছু নাই। সকলেই পা দিয়ে বল লাথি দিবে। বলা যায় খেলার ধরণ পর্যন্ত এখন পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে মাঠ স্বল্পতার কারণে। মাঠ ছোট হলেতো আর ছক্কা কিংবা জোরে শ্যুট করা যাবে না। যদি এভাবে খেলতে হয় তবে স্টেডিয়ামে যেতে হবে। কিন্তু স্টেডিয়াম তো জাতীয় দলের জন্য। সাধারণ মানুষের জন্য না। তাছাড়া
একসময় ছক্কা মারার মতো মাঠ আমাদের দেশে সত্যি হারিয়ে যাবে থাকবে শুধু স্টেডিয়াম গুলো। এরকারণ আমাদের দেশে অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণ। এখন খালি জায়গা থাকলেই সেথানে দালনকোঠা বেঁধে ফেলার
পরিকল্পনা চলে। সকলেই এখন যার যার নিজস্ব লাভ খুঁজে। বাচ্চারা খেলাধুলা করলে তাদের তো কোনো লাভ নেই। তাই খালি জায়গা ফেলে রাখবে কোনো তারা। কিন্তু এই বাচ্চারা যে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ সেটা কেউ চিন্তা করে না।এভাবেই চলে আমাদের সমাজ। আর ভবিষ্যতেও এভাবে চলবে। কারণ মানুষের ভেতর এখন
স্বার্থপরতার গন্ধ এসেছে। সকলেই এখন নিজেকে নিয়ে চিন্তায় ব্যস্ত দেশ, সমাজ ও জাতিকে নিয়ে তাদের ভাবার সময় নেই। এটাই যখন দেশের অবস্থা তখন খেলার মাঠ কিভাবে শিশু এবং তরুণরা পাবে। তবে কি এভাবেই চলতে থাকবে দেশ? কেউ কি নেই এদের নিয়ে ভাবার মতো? প্রশ্নটা রয়েই গেলো। কিন্তু এই খেলাধুলার মাঠ
না থাকলে শিশু এবং তরুণ সমাজ একদিন হুমকি হয়ে দাড়াবে দেশের জন্য। আগামী দিনের ভালো মানের খেলোয়াড় খুঁজে পাবে না বাংলাদেশ। মাদক এবং নেশায় আসক্ত হতে সময় লাগবে না তরুণ সমাজের। সেদিন বেশী দূরে নয়, যেভাবে হারিয়ে যাচ্ছে
মাঠ তাতে মনে হয় অতিসন্নিকটে আমাদের দেশে ভংকর এক সময় আসবে। তাই আসুন আমরা সকলেই এই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখি এবং খেলার মাঠ তৈরী করে দিই শিশু ও তরুণদের।


লেখক: আজহার মাহমুদ

প্রাবন্ধিক ও ছড়াকার
শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।
ইমেইল: azharmahmud705@gmail.com
মোবাইল: ০১৮৩০১৩৬৮৩৪

Comments

Popular posts from this blog

শিশুতোষ গল্পঃ রাজকন্যা ও ব্যাঙ | মোনোয়ার হোসেন

খোকা আঁকে | তৌহিদ আহাম্মেদ লিখন

গল্প : পিতার আর্তনাদ | কবির কাঞ্চন