প্যারেন্টিংঃ অভিভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণঃ প্যারেন্টিং এর কয়েকটি অজানা বিষয় যা আপনি কখনও খেয়াল করেন নি

____________________
প্যারেন্টিং নিয়ে এই অনেকেই আলোচনা করেছেন। সন্তান লালনপালনে অভিভাবকরা কি ভুমিকা রাখবেন তাই আমরা সাধারনত প্যারেন্টিং বলে থাকি।আজ আমি শুধু প্যারেন্টিং এর ক্ষেত্রে আমার কিছু অভিজ্ঞতা ও বিষয় আলোচনা করবো। আসুন দেখে নেই কি কি বিষয় থাকছে আজকের আলোচনায়।
১/ স্কুলে সন্তানের অবস্হাঃ
আপনার সন্তান স্কুলে যাচ্ছে, বাসায় আসছে আর আপনিও স্বস্হির নিঃশ্বাস ফেলছেন যে, যাক আমার বাচ্চা তাহলে পড়ালেখা ভালই করছে। কিন্তু আপনি হয়তো খেয়াল করেন নি, আপনার অজান্তেই আপনার সন্তানটি কোনো না কোনোভাবে শারিরিক, মানুসিক কিংবা যৌন হয়রানীর শিকার হচ্ছে। আর, আপনার সন্তান সেটা লজ্জা বা ভয়ে বলতে পারছে না। এসব কাজে হয়ত স্কুলের শিক্ষক, কর্মচারী এমনকি ঝালমুড়ি ও আইসক্রিমওয়ালারাও জড়িত থাকতে পারে। তাই সময় দিন। সপ্তাহে একদিন হলেও তার স্কুলে যান, চারপাশ খেয়াল করুন, বাচ্চাকে খুব কৌশলে বুঝিয়ে বলুন, যে তার সাথে কোনো সমস্যা হচ্ছেনাতো? তার উত্তর যদি ইতিবাচক হয় তারপরও চুপ থাকবেন না। কারন, এসব ক্ষেত্রে শিশুর আচরনের ও কাজকর্মের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। আপনি ভালোভাবে খেয়াল করলে সেটা বুঝতে পারবেন। আর, স্কুলে যে যাচ্ছেন এটা যেনো, কেউ আগে থেকে টের না পায়। তাহলে তারা কৌশলে আপনাকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করবে। হঠাৎ করেই স্কুলে গিয়ে হাজির হবেন। তবে, আগে স্কুলের চারপাশ আর আপনার বাচ্চাকে খেয়াল করুন। তারপর শিক্ষদের সাথে দেখা করুন। এতে কোনো দুষ্টচরিত্রের শিক্ষক বা কেউ থাকলে ভয় পাবে। মনে রাখবেন, শুধু মেয়ে শিশু নয় ছেলে শিশুরাও যৌন হয়রানীর শিকার হয় যা আমরা ভালভাবে খেয়াল করিনা। এ ব্যাপারে আমি ২ নং অংশে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
২/ বাসায় গৃহশিক্ষক ও কোচিং এর শিক্ষকদের অবস্হা পর্যবেক্ষণঃ
এই ২ অংশটি খুব স্পর্শকাতর কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। তাই কেউ আমাকে ভুল বুঝবেন না। শালিনতার জন্য বিশেষ শব্দ গুলো এরিয়ে চললাম। এটি বুঝার আগে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করছি।
*** ঘটনাঃ১***
বাবু ( ছন্মনাম) তখন একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ক্লাস ৪ এ পড়তো। ছুটির পর কয়েকজন শিক্ষক পরিক্ষার জন্য কোচিং করান। বাবুরও ব্যতিক্রম হল না। একদিন মা বললো, যাও তো বাবু কে দেখে আসো। আমি স্কুলে গেলাম। ছুটি হয়েছে। সব বাচ্চা চলে যাচ্ছে। আমি বাবুকে দেখে কাছে যেতেই দেখি ওর চোখ লাল হয়ে গেছে। কিছুটা মন খারাপ। আমি বাবুকে বললাম, কি হয়েছে? সে বললো, কিছু না, এমনি। আমি ওর স্যার এর সাথে দেখা করতে চাইতেই ও আমার টিশার্ট টেনে ধরে বললো, চলো বাড়ি যাই। বাসায় আসলাম। সন্ধার পরও বাবুর মন খারাপ। আমি বললাম, স্যার মেরেছে নাকি বকা দিয়েছে?
সে কিছুই বলছিলোনা। আমার কেনো জানি খটকা লাগলো। বললাম, আমাকে বলো, ভয় পেয়না। ওর কথা শুনে আমি তো থ। কেঁদে কেঁদে বললো, স্যার প্রায় দিন অংক করার সময় ওর শরিরের বিশেষ অংশ টাচ করে। আমি বাবাকে বলতেই, বাবা বললেন, থাক যা বুঝার বুঝে গেছি। অন্য ভালো স্কুলে ভর্তি করিয়ে দাও। কালকেই দাও। আমি তাই করলাম। বাবু ক্লাস ফাইভ এর সমাপনী পরিক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিলো। আমি যদি সেদিন বিষয়টি না বুঝতাম বা এরিয়ে চলতাম তাহলে বাবুর জীবনে ছন্দপতন ঘটতো। ভালো রেজাল্ট না করে অন্য কিছু ঘটে যেতো। পাঠক, লক্ষ করুন, বাবু কিন্তু ছেলে শিশু। তাহলে শিক্ষকের কেনো এরকম কাজ করার দরকার পড়লো। আসলে আমাদের সমাজে মানুষ নামের কিছু কলঙ্ক আছে যারা মুলত শিশুকামী। এদের দ্বারা এসব ঘটনা ঘটতে পারে। তাই সাবধান হোন। মনে রাখবেন মেয়ে হোক আর ছেলে হোক শিশুরা সবসময় নিরাপত্তা ঝুকিতে থাকে। সর্তক হোন।
***ঘটনাঃ২***
ফেসবুকে আছি। হঠাৎ মেসেজ রিকোয়েস্ট। গ্রহন করতেই দেখি, হাই বলে মেসেজ দিল। রিপ্লাই দিয়ে প্রোফাইল চেক করতেই চমকে গেলাম। জন্মতারিখ ২০০৪ সাল। মানে বয়স মাত্র চৌদ্দ। আর প্রোফাইল পিকচার টা অশ্লিল। একজন যুবক লোকের সাথে একটি বালক ঘনিষ্ঠ দৃশে আছে। ওকে বললাম, তোমার বয়স কম। ফেসবুক ব্যাবহার করতে দেয় কিভাবে তোমার বাবা- মা? প্রোফাইল পিকচার খারাপ কেনো?ছেলেটি বললো, আমি ----।
মানে?...
সে আমায় বুঝিয়ে দিলো। আমি বললাম, বাবা, এতো অল্প বয়সে নিজেকে এসবে কেনো জোরালে?
সে বললো, সে সেভেনে পড়ে। জিলা স্কুলে। তার ফোন নাই। এটা ওই স্কুলের 'সুপারম্যান' স্যার কিনে দিয়ে লুকিয়ে রাখতে বলছে। ফোনে উনি ওই রকম কিছু ভিডিও?!! লোড করে রাখেন। স্যার রাতে পড়াতে এসে ওর সাথে জোর করে.......
ভিডিওগুলোর মতো।
আমি বললাম, কেনো তুমি তোমার আম্মুকে বলনা কেনো? সে বললো স্যার ভয় দেখিয়ে বলে, না হলে স্কুলের খাতায় মার্ক কম দিবেন। আর ও.... কাজে রাজি না হলে, মাথায় আঘাত করে।
পাঠক, আমি কোচিং ও গৃহশিক্ষকের বিরোধী নয়। তবে, খারাপ শিক্ষক আসলে শিক্ষক নামের কলঙ্ক। তাই নিরিবিলি পরিবেশে শিশু প্রাইভেট পড়ুক কিন্তু সেটা যেনো আপনারা খেয়াল রাখতে পারেন এমন রুমে রাখুন। মনে রাখবেন, শিশুর শরিরের স্পর্শকাতর অংশ শুধু বিশেষ প্রয়োজনে চিকিৎসক, বাবা-মা, ভাই-বোন হাত দিবেন। অন্য কেউ দিলে সাবধান হোন।
৩/ সন্তান কার সাথে মিশছেঃ
আপনার সন্তানকে মিশতে দিন। সে শিখুক, সামাজিক হোক তার ব্যাক্তিত্ব গড়ে উঠুক। তবে শিশু বেশি মিশতে গিয়ে যেনো অসামজিক না হয়, খারাপ কিছু না শিখে। আপনার একটু অবহেলা বা অসৎ সঙ্গ শিশুর ব্যাক্তিত্বজনিত সমস্য (Personality Disorder) নামক ভয়ানক মনোরোগ সৃষ্টি করতে পারে। যা কিনা সে আজীবন বয়ে নিয়ে বেড়াবে। তাই খেয়াল রাখুন আপনার শিশু কার সাথে মিশছে। সে কোনো বিকৃত যৌনরোগীদের খপ্পরে পড়ছে না তো? এবং এ কাজে আপনার বাড়ির কাজের লোক বা শিশুর শিক্ষকরাও জরিত থাকতে পারে। কেনো বলছি জানেন? জানুন তাহলেঃ
আমরা জানি যৌনঅভিমুখিতা সম্পর্কে গোটা বিশ্বে বিতর্ক রয়েছে। পৃথিবীতে ৬৫% বিষমগামী পুরুষ বা নারী রয়েছে। এরা স্বাভাবিক যৌনজীবন যাপন করেন। বাকি ৩৫% এর মধ্যে কিছু উভয়গামী নারী বা পুরুষ রয়েছে। এরাই কখনও সমকামী, শিশুকামী এমন কি পশুকামী পর্যন্ত হয়। এদের দ্বারাই বেশিভাগ শিশুরা এরকম পরিস্হিতির শিকার হয়। এরা বিকৃত মানুসিক যৌন রোগী। বিজ্ঞান আজও এদের চিকিৎসা বা প্রতিরোধ আবিষ্কার করতে পারেনি। তবে বিজ্ঞানীদের ধারনা, কিছু জিনগত, হরমনগত এবং অশ্লিল পর্নগ্রাফি এর জন্য দায়ী। এছারা, এটাও খেয়াল রাখা উচিত যে, বাকি ৩৫% এর মধ্যে যদি আমার শিশুটিও হয় তাহলে কি করবো? সহজ উত্তর হলো ঘাবরাবেন না। এটি মানুসিক বিকাশজনিত সমস্যা (Neuro-Devolpement Disorder). সময় মতো চিকিৎসক এর পরামর্শ নিলে সেরে যায়। ডক্টর এর দেয়া ঔষধ,হরমোন ইনজেকশন, সাইকোথেরাপি এবং কাউন্সেলিং প্রয়োগ শিশুকে স্বাভাবিক জীবনে আনতে সহায়তা করে। মনে রাখবেন, কাউন্সেলিং বিভিন্ন প্রকার হয়। যেমনঃ ১.ডক্টর কাউন্সেলিং, ২. পারসোনাল কাউন্সেলিং, ৩. ফ্যামিলি কাউন্সেলিং ৪. গ্রুপ কাউন্সেলিং। এগুলো বিশেষজ্ঞরাই বলবেন। আমি শুধু মনে করিয়ে দিলাম। এখন কিছু ঘটনা দেখি যেগুলো আমি নিজ পর্যবেক্ষন, জরিপ ও গবেষনা করেছি।
***ঘটনাঃ১***
২০০১৪ সাল। আমি বাবার চ্যাম্বারে বসে আছি। হঠাৎ করে একজন লোক আসলেন একটি ছেলে শিশুকে নিয়ে। কি সমস্যা? আমরা যেটা শুনলাম ও পর্যবেক্ষণ করে জানলাম সেটা হলো, এই শিশুটি কারও সাথে মিশেনা। কেনো? কারন, তার মেয়েলী আচরন নিয়ে সবাই হাসাহাসি করে। সেও মেয়েদের মতো লালশাড়ি, চুড়ি এগুলো পড়তে ভালোবাসে। ছেলে শিশুকে দেখলে ভয় ও লজ্জা পায়। এজন্য তারা শাসন করায় শিশুটি কিটনাশক খেয়ে মরতে চাচ্ছে। বাবা ভদ্রলোককে বুঝিয়ে বললেন যে, এটা মানুসিক সমস্যা এবং আপনি শহরে গিয়ে ভালো সাইক্রিয়াটিস্ট দেখান। এখন থেকে তার আচরন পরিবর্তনের সকল চেষ্টা করুন। তাকে বুঝান সে পুরুষ। আর তাকে পুরুষ সমাজের নিয়ম গুলো শিখতে হবে। মেয়ে শিশু মেয়ে সমাজের নিয়ম মেনে চলবে। ফলে, একটি ছেলে শিশু ছেলে হিসেবে আর একটি মেয়ে শিশু মেয়ে হিসাবে গড়ে উঠবে। এখানে হাসাহাসি বা বিদ্রুপের কোনো কারন নেই। পরে লোকটি শহরে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা ও পরামর্শ নিয়ে শিশুটি স্বাভাবিক হয়েছে যেটা আমি খেয়াল করি গত ২০১৫ সালের দিকে।
**ঘটনাঃ২**
২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাস। রিনা( ছদ্মনাম) মাকে বিরক্ত করছে। তাই ওর মা রিনাকে কাজের জোয়ান ছেলে রফিক কে দিলেন। রফিক ওকে ভালই আদর করে। একদিন ভাবী খেয়াল করেন, রিনা না না বলে চিৎকার করছে। মা সেখানে যেতেই দেখেন রফিক রিনাকে কিছু বলছে। তার মনে খোটকা লাগে। তিনি রফিককে জিজ্ঞাসা করায় সে বলে, কিছুনা বুবুজান। কিন্তু রিনা কেঁদে বলে, রফিক ওর প্যান্ট টেনে খুলতে চায়। কিন্তু রিনা শুধু 'না, না 'বলে চিৎকার করেছিলো। পরে বিষয়টি না বারিয়ে রফিক কে কৌশলে শাসিয়ে বিদায় করে দেয়া হলো। পাঠক, কিছু বুঝলেন। শিশু কতো অসহায় হতে পারে অপরাধীর কাছে। শিশুটি কিন্তু আজ বড় হয়ে গেছে। সে এখন ইন্টারমিডিয়েট পড়ছে। অথচ সেদিন রফিক যদি কিছু একটা করে ফেলতো তাহলে আজ আমরা কলেজ পড়ুয়া সুস্হ রিনাকে দেখতাম না। তাই সাবধান হোন। কাজের লোকের কাছে শিশুকে দিয়ে বাইরে যাবেন না। তবে এটাও খেয়াল রাখা উচিত, সব কাজের লোক খারাপ না।
৪/ বয়ঃসন্ধিকালিন স্বাস্থ্য ও জেনারেল হাইজিনঃ কি এবং কেনোঃ
সাধারন স্বাস্থ্য সচেতনতা বা Genarel Hygiene প্রত্যেক কে জানতে হবে। আর এ বিষয়ে শিশুদের কেনো বাদ দিবেন? বরং শিশুরাই বেশি স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে থাকে। সাধারনত আমাদের দেশে যৌনশিক্ষা কে ট্যাবু বা নিষিদ্ধ মনে করা হয়। অথচ যৌনতা কোনো নিষিদ্ধ জিনিস নয়। শরিরের সাথে এর সম্পর্ক রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, শিশুকে তার শরিরের সীমা বুঝতে দিন। অর্থাৎ, শিশুদেরকে তার দেহ সম্পর্কে জানতে হবে মেডিকেল সাইন্স মেনে। এটা খারাপ কোনো বিষয় নয়। অথচ সম্প্রতি স্কুল ও মাদ্রাসার সিলেবাসে শারিরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয় টি অন্তর্ভুক্ত করায় কিছু শিক্ষক নামের কলঙ্ক উস্কানি ছরাচ্ছে। অথচ তারা না জেনেই বিষয়টির বিরোধীতা করছেন। আরে ভাই, আগে জানুন তারপর না হয় বলুন। একটি কথা বলে রাখি আমার এ লেখা কোন ধর্মকে কটাখ্য বা সমালোচনা করার জন্য নয়। বরং ধর্মীয় মুল্যবোধ রক্ষা করেই আলোচনা করবো। প্রথমে আসি বয়ঃসন্ধি কালিন স্বাস্থ্য ঝুকি নিয়ে। সাধারনতঃ ছেলেদের ১৩ বছর আর মেয়েদের ৯ বছর বয়স থেকে ১৯ বছর পর্যন্ত বয়ঃসন্ধিকাল বলা হয়। এসময় ছেলে ও মেয়েদের শারিরিক ও মানুসিক পরিবর্তন দেখা দেয়। ছেলেদের দাঁড়ি ও গোফ, বুকে,পেটে,বগলে এবং যৌনাঙ্গের আশেপাশে লোম গজায়। তার কন্ঠ পুরুষালি ও ভারি হয়। বিপরিত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। দেহ পেশিবহুল ও বড় হয়। শরিরে অন্তক্ষরা গ্রন্থি থেকে পুরুষ হরমোন এন্ড্রোজেন নিঃসরণ হয়। ফলে Libido বেরে গিয়ে বির্যপাত(Ezaculation) হয়। ফলে হঠাৎ সে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেনা। ছেলেশিশুটি ঘাবরে যায়। তাছারা থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরয়েড হরমোন এর নিঃসরণ ও মস্তিষ্কের পিনিয়াল গ্রন্হি সাথে সমন্বয় না হয়াতে ছেলে শিশুটির মনোযোগ বিঘ্নিত হতে পারে। সে হতাশা, বিষন্নতা ও সামাজিক ভীতি(Social Fobia), পরিক্ষা ভীতি(Exam Fobia) তে ভুগতে পারে। অনেক সময় ছেলে শিশুটি সুইসাইড কমিট করতে পারে। আর এজন্য বাবা আর বড় ভাই হলো তার আপন লোক। আপনি সন্তানকে বুঝিয়ে বলুন, এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। ভয় বা লজ্জার কিছু নেই। তাকে শরিরের অপ্রয়োজনীয় লোম কাটতে উৎসাহ দিন। পারলে তাকে নিরাপদ বডি রেজর কিনে দিন। তাকে এটাও সতর্ক করুন যে, এই কাজটি সে যেনো সাবধানে করে না হলে স্পর্শকাতর অংশ কেঁটে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ছেলে শিশুকে বাড়িতে ঢিলা ট্রাউজার বা লুঙ্গি পড়তে উৎসাহ দিন। কাপর পড়লে অবশ্যই যেনো অন্তর্বাস পড়ে। প্রয়োজনে আপনি কিনে দিন। অতিরিক্ত বির্যপাত হতেই পারে। সন্তানকে লজ্জা না দিয়ে বুঝিয়ে বলুন এবং প্রয়োজনে ডক্টরের সাহায্য নিন। এবার আসি মেয়ে শিশুদের বেলায়। সাধারনত ৯ বছর বয়স থেকে একটি মেয়ে বয়ঃসন্ধি কালে পা দেয়। তার শরিরে ইস্ট্রোজেন হরমোন নিঃসরিত হয়ার ফলে তার কিছু শারিরিক ও মানুসিক পরিবর্তন হয়। বক্ষ উন্নত হয়া, স্তনের বিকাশ, কন্ঠসর মেয়েলী ও সুরেলা হয়া সহ জরায়ুতে কোন অজানা কারন ছারা রক্ত নিঃসরন হয়। কারন, জরায়ুর অনেক রক্ত ঝিল্লি ছিঁরে গিয়ে এমন টা হয় প্রতি মাসে। একে আমরা Period বা মাসিক বলি। এটি হলো ঋতুচক্র। এসময় মেয়ে শিশুর প্রচুর রক্তস্রাব হয়। তল পেটে ব্যাথা (Abdominal Pain) হয়। তাই ডক্টরের পরামর্শ নিয়ে ব্যাথাপ্রশমনের ওষধ খেতে হবে।এসময় মেয়ে শিশুটি মানুসিকভাবে ঘাবরে যায়। সে ঋতুস্রাবকালীন বিষন্নতায় ভুগতে পারে। অনেকে আবেক নিয়ন্ত্রন করতে না পেরে আত্মহনন এর পথ বেছে নেয়। তাই মা বা বড় বোন কে তার বন্ধু হতে হবে। তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে যে, এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। ভয়ের কিছু নেই। তাকে নরম পরিস্কার কাপর বা তুলো ব্যবহার করতে বলতে হবে। তবে ন্যাপকিন ব্যাবহার করাই উত্তম। আর, বাবাই ন্যাপকিন কিনে আনলেন তো কি সমস্যা? এসময় যেহেতু প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় তাই মেয়েদের রক্তশুণ্যতা দেখা দেয়। তাই তাকে প্রচুর পরিমান স্বাস্থ্যকর খাবার, আয়রন ও ফলিক এসিড খাওয়াতে হবে। তাছারা মেয়েরাই হাড়ক্ষয় বা অস্টিওপোরোসিস রোগে আক্রান্ত হয়। তাই ক্যালসিয়াম এর ঘাটতে পুরনের জন্য বিশুদ্ধ ও খাঁটি দুধ খাওয়ানো উচিত। ব্রেস্ট এর স্বাভাবিকতা বজায় রাখার জন্য মা বা বড় বোন ব্রেসিয়ার করতে উৎসাহ দিবেন। প্রয়োজনে ব্রা বা অন্তর্বাস কিনে দিন। পরিবারের সবাই মনের কথা খুলে বলুন সবাইকে। হাসুন, খেলাধুলা করুন, ঘুরতে যান।
৫/ সময়মত ছেলে শিশুর খৎনা করানোঃ
ইসলাম ধর্মে ছেলে শিশুর খৎনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসলামে এটি ফরজ বা বাধ্যতামুলক নয়। এটি নবী আব্রাহাম বা ইব্রাহিম ( আঃ) চর্চা। তাই মুসলীম ও ইহুদী ধর্মালম্বীরা করে থাকে। তবে ইহুদী ধর্মের ওল্ডটেস্টামেন্ট এ এটি ফরজ ও বাধ্যতামুলক। আর বাইবেল এর নিউ ভার্সন বা নিউটেস্টামেন্ট এ এটি অপ্রয়োজনীয়। তাই ক্যাথলিক, প্রোটেসেন্ট খ্রিষ্টানরা এটি করেনা। শুধু কপটিক খ্রিষ্টানরা আংশিক করে। তবে পবিত্র কোরআনে কোথাও খৎনা সম্পর্কিত কোন আয়াত বা নির্দেশনা নেই। তাই এটি নিয়ে বিতর্ক করার কোনো কারন নেই। পৃথিবীতে একমাত্র আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে খৎনা (Curcumcision) স্বাস্থ্যগত কারনে বাধ্যতামুলক, ধর্মীয় কারনে নয়। ইসলামে স্বাস্থ্যগত কারনেই এটি করতে বলা হয়, বাধ্য করা হয়না। যদিও বেশিরভাগ মুসলিম দেশে এটা ধর্মের নামে সামাজিক প্রথা ও অনুষ্ঠানে রুপ নিয়েছে। এর কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারীতা রয়েছে। যথাঃ
১/ পুরুষের ফাইমোসিস রোগ প্রতিরোধ করে
২/ নারীদের জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
(সবচেয়ে বেশি)
৩/ যৌনসংক্রমিত রোগ প্রতিরোধ করে।
৪/ শিশুর স্বাস্থ্য ভালো থাকে
৫/ পরিষ্কার থাকে।
৬/ পেনাইল ক্যান্সার প্রতিরোধ করে( কম পরিমান)
তাই সময়মত ছেলে শিশুর খৎনা করান। মনে রাখবে, ৫ বছরের নিচের শিশুকে খৎনা করাবেন না। কারন, এসময় শিশুর লিঙ্গমুণ্ড খুব নাজুক থাকে। তাই ৫ বছর এর পর খৎনা করান। বয়স হয়ে খৎনা করানো নিরাপদ নয়। তবে তথাকথিত হাজাম বা ওস্তাদ দিয়ে এ কাজ করা ঝুকিপুর্ন। আপনি জানেন কি প্রতি বছর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এ ১০ জন শিশু মারা যায়?যার জন্য ভুল পদ্ধতি দায়ী। খৎনা অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ সার্জন ও ইউরোলজিস্ট দিয়ে করান।
৭/ কখন খৎনা করাবেন নাঃ
নিচের কিছু বিষয় খৎনার ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয়।
যথাঃ
১/ খৎনা এইচ আইভি এইডস প্রতিরোধ করতে কোনো ভুমিকা রাখেনা।
২/ খৎনার ফলে পুরুষাঙ্গ টান টান হয় ফলে এর আকৃতি খাটো দেখায়। পিছনের মোটা রগটি ফ্রিলেনাম যা কিনা প্রসারনের সময় চাপ পেয়ে ব্যাথা বা রক্তপাত হতে পারে।
৩/ খৎনার ফলে লিঙ্গমুণ্ড শুষ্ক হয়ে এর উজ্জলতা ও কমনীয়তা হারিয়ে ফলে। ফলে যৌনমিলনে কম ওর্গাজম হয়।
৪/ খৎনা করার পরও লিঙ্গ অপরিষ্কার থাকতে পারে যেখানে খৎনা না করেও পরিষ্কার থাকা যায়।
৫/ আমরা জানি চর্মের মাধ্যমে আমরা অনুভব করি। চর্মে কতগুলো নার্ভচেইন থাকে যেগুলো মস্তিষ্কে সংকেত দেয়। এগুলো কে বলে, Cutaneous Nerve Net Works.খৎনার ফলে এগুলো বাদ পরে। তাছারা ফোরস্কিন বা লিঙ্গাগ্র চর্ম প্রচুর এন্টিবডি উৎপন্ন করে, যা শরিরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও বাইরের যে কোনো আঘাত থেকে গ্লান্ডস পেনিস কে রক্ষা করে
তাই খৎনা করে উপকার যেমন পাওয়া যায় তেমনি না করেও ভালো থাকা যায়। আপনি জানেন কি পৃথিবীর ৮০% সভ্য জনগোষ্ঠী খৎনা না করেও ভালো আছে আর মাত্র ২০% জনগোষ্ঠী ধর্মীয় ও কিছু সমস্যার জন্য খৎনা করে। যেমনঃ
লিঙ্গাগ্র চর্ম বেশি ঝুলে থাকার ফলে প্রসাব করতে সমস্যা হয়া, টাইট ফোরস্কিনের কারনে লিঙ্গমুণ্ড পুরো সজা না হয়া অনেক সময় রক্তপাত পর্যন্ত হয়।
তাই, আমরা বলতে পারি, খৎনা সবার জন্য উপকারী হলেও কারও কারও সমস্যা হলে তাদের ক্ষেত্রে না করাও উত্তম। অর্থাৎ একজন সার্জন ভালো বলতে পারবেন, কোন শিশুটির খৎনা হবে আর কোনটির প্রয়োজন নেই। লিঙ্গাগ্র চর্মের পরিমান বলে দেবে, খৎনা করতে হবে নাকি হবেনা। খৎনার সাথে মুসলমান হয়া না হয়ার কোনো মৌলিক সম্পর্ক নেই। বিষয়টি একদম প্রথাগত। যা হোক, এটা একান্তই আপনার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। আমরা শুধু সত্য তুলে ধরছি।
৭/ স্যাটেলাইট ও অনলাইন ব্যবহারে সন্তানের
প্রতি খেয়ালঃ
প্রযুক্তি ব্যাবহার সবার জন্য মঙ্গলজনক হলেও আপনি জানেন কি শিশুদের উপর এর ভয়ানক প্রভাব পড়ে? বিজ্ঞান আজও ডিজিটাল ডিভাইস গুলো থেকে ক্ষতিকারক গামা রশ্মি নির্গত হয়া বন্ধ করতে পারেনি। এগুলো, মস্তিষ্ক ও চোখের মারাত্মক ক্ষতি করে। চীন বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ভিডিও গেম বাজারজাত করলেও স্বয়ং তারাই তাদের শিশুদের এটা খেলতে নিষেধ করে কেনো জানেন? কারন,ভিডিও গেম এর তেজস্ক্রিয়তা ব্রেইনের নিউরন সেলগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়। তাছারা অতিরিক্ত ইন্টারনেট ও সেটেলাইট ব্যাবহার IAD বা Internet Addicted Disorder নামক ভয়ানক মানুসিক রোগ হতে পারে। আমরা জানি, ওয়েবের ৩ টি স্তর থাকে। যথাঃ
১/ নরমাল ওয়েব
২/ ডিপ ওয়েব
৩/ ডার্ক ওয়েব
শিশুরা ডার্কওয়েবে ভুল করে চলে যেতে পারে। তাছারা পর্ণগ্রাফি ভয়ানক ভাবে শিশুদের নৈতিক অবক্ষয় ঘটাতে পারে। তাই সাবধান হোন। শিশুদের শিক্ষামুলক কার্টুন, ভিডিও দেখতে উৎসাহ দিন। ফেসবুক নয় উইকিপিডিয়া তে সময় দিন অনেক সঠিক তথ্য পাবেন। ১৮ বছরের নিচের শিশুরা যেনো কোনোভাবেই ফেসবুক বা এজাতীয় সাইটে একাউন্ট না খুলে। ভিডিও গেম খেলুক তবে খেয়াল রাখুন তাতে যেনো বেশি সময় না দেয়।
আজ, আর আলোচনা বেশি বারাবো না। শিশুরা সুস্হ থাকুক, ভালো থাকুক এই কামনায় বিদায় নিচ্ছি। সবাই কে ধন্যবাদ।
লেখকঃ
কবি,শিশুসাহিত্যিক, গল্পকার ও ছড়াকার
গড়েয়া, ঠাকুরগাঁও।
মুঠোফোনঃ০১৭২৩১৮২১৬৯.
ইমেইলঃahmadkibria24@gmail.com.

Comments

Popular posts from this blog

শিশুতোষ গল্পঃ রাজকন্যা ও ব্যাঙ | মোনোয়ার হোসেন

খোকা আঁকে | তৌহিদ আহাম্মেদ লিখন

গল্প : পিতার আর্তনাদ | কবির কাঞ্চন